চুলের যত্ন যেভাবে নিলে চুল কখনোই নষ্ট হবেনা
চুলের যত্ন কিভাবে নিলে চুল কখনোই নষ্ট হবেনা? এই প্রশ্ন আমাদের সবার মনেই ঘুরপাক খায়। আমরা যখনই কোন কোনো শ্যাম্পুর অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখি, তখনি মডেলের চুলের মতো নিজের চুলকে কল্পনা করতে থাকি।
আবার যখন কোনো কার্টুনের রাজকন্যা সিন্ড্রেলা, স্নো-হোয়াইট অথবা জেসমিন কে দেখি তখন আমাদের মনে হয় ইশ, আমারও যদি এমন চুল হত। এই ভাবনা যে শুধু আপনার বা আমার তা নয় এই ভাবনা সকলের। কারন যে কেউ চাইবে এমন অপূর্ব চুলের অধিকারী হতে কিন্তু এর জন্য দরকার সুস্থ এবং উজ্জ্বল চকচলে নরম চুল।
বাংলাদেশের আবহাওয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে চুলকে মনের মতো করে রাখতে পারাটাই একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবে চলুন আজকে এই ব্লগের মাধ্যমে জেনে নেই কিভাবে খুব সুন্দর উজ্জ্বল চুল পেতে পারি এবং চুলকে ধরে রাখতে পারি আজীবন।
চুলের যত্নে কিছু কার্যকরী টিপসঃ
চুলকে সুরক্ষিত রাখুনঃ
সবসময় চেষ্টা করুন চুলকে সূর্যের আলো, রোদ, বৃষ্টি থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। সূর্যের কড়া রোদ, তাপ, ধুলাবালি চুলের দূর্দশার অন্যতম কারণ।
রোদ, বৃষ্টিতে ছাতা ব্যবহার করা উত্তম, তবে অনেকে ছাতা পছন্দ করেনা সেক্ষেত্রে স্কার্ফ ব্যবহার করতে হবে। এতে করে চুল অনেকটা সুরক্ষিত থাকবে।
ভেজা চুল সাবধানে ট্রিট করুনঃ
ভেজা চুল ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে, তাই চুল ভেজা থাকলে চুলের গোড়া অনেক নরম থাকে। এই সময় চুল সহজেই গোড়া থেকে খুলে যাওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই চুল শ্যাম্পু করার সময় আস্তে আস্তে কোমল হাতে শ্যাম্পু করতে হবে এবং চুল মোছার সময় আলতো হাতে চুল মুছতে হবে। এছাড়াও গোসলের পরপরই চিরুনি ব্যবহার করা যাবে না।
সঠিকভাবে শ্যাম্পু ব্যবহারঃ
অনেকেই শ্যাম্পুকে সরাসরি চুলের ওপর দিয়ে দেয় এতে করে চুল পড়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায়। সঠিক পদ্ধতিতে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে, এতে চুল পড়ার পরিমান কমে যাবে।
প্রথমে একটি মগে অল্প পরিমাণ পানি নিতে হবে এবং শ্যাম্পু পানিতে গুলে নিতে হবে। এরপর চুলে এপ্লাই করতে হবে ও আলতো হাতে ম্যাসাজ করতে হবে। একই পদ্ধতিতে দুইবার শ্যাম্পু করুন এতে করে চুল ভালোভাবে গোড়া থেকে ভালোভাবে পরিষ্কার হবে। চুল পরিষ্কার রাখতে এখন পক্ষে ২ দিন শ্যাম্পু করুন।
সঠিকভাবে কন্ডিশনার ব্যবহারঃ
শ্যাম্পু করার পর প্রতিবার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন এতে চুল কোমল নরম এবং মসৃণ হবে এবং চুল ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে ব্যবহার করুন সঠিক নিয়মে। কন্ডিশনার এর কাজ হল চুলকে নরম মৌসৃণ রাখা তবে, চুলের গোড়াতে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। চুলের গোড়া থেকে অন্তত এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা রেখে কন্ডিশনার এপ্লাই করুন। চুলের গোড়াতে কোনোভাবেই যেন কন্ডিশনার না পৌঁছায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
চুলের যত্ন ও হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারে সচেতন হোনঃ
আমরা চুলের যত্নে ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকি। যেমন- কোন কোম্পানির তেল, কোন কোম্পানির শ্যাম্পু, কোন কোম্পানির কন্ডিশনার ব্যবহার করি। এতে করে আমাদের চুলে অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চুলকে সুস্থ রাখতে হলে একই কোম্পানির সবগুলো প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে।
চুলে হিট দেওয়াঃ
যেকোনো ধরনের তাপ চুলকে নষ্ট করে দেয় এবং ভেঙে ফেলে তাই চুলে তাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। চুল স্ট্রেইটনার বা আয়রন ব্যবহারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে কারণ এ সময় অতিরিক্ত তাপের কারণে চুল জ্বলে যেতে পারে।
তোয়ালে ব্যবহারঃ
অনেক চুল মোছার সময়, খুব জোরে জোরে ঘষে ঘষে চুল মুছে। যার কারনে চুল ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। তাই চুল মোছার সময় আলতো হাতে চুল মুছতে হবে।
চুল বাঁধাঃ
আমরা ঘুমের পূর্বে সবাই খুব শক্ত করে বেণী করি। এক্ষেত্রে কিছু চুল খুব টানটান ভাবে থাকে যেগুলো ছিড়ে যাওয়ার বা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও চুলের গোড়া নরম হয়ে যেতে পারে। তাই শক্তপক্ত ভাবে চুল বাধা থেকে বিরত থাকুন এবং ঢিলেঢালা ভাবে চুল বাধুন।
ভালো বালিশের কভার ব্যবহারঃ
বালিশের কভার ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। পাতলা ও নরম কাপড়ের কভার ব্যবহার করতে হবে। এতে করে চুল ভেঙে যাওয়া বা ঝরে যাওয়ার ভয় কমে যাবে।
উক্ত নিয়ম ছাড়াও আরও অনেক উপায়ে চুলের যত্ন নেওয়ায়া যায়। যেমন-
- নিয়মিত তেল দিন।
- মাথার ত্বকে হট অয়েল মাসাজ করুন।
- চুলে টিজিং করা থেকে বিরত থাকুন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন, গরম পানি ব্যবহার পরিহার করুন।
- চুল নিয়মিত ব্রাশ করুন, এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
- চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। চুল তৈলাক্ত হলে ১৫ দিন এবং শুষ্ক হলে ১০ দিন পর পর।
- অতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, ন্যাচারাল ইনগ্রিডিয়েন্ট ব্যবহার করুন।
- স্বাস্থ্যকর সতেজ খাবার খান এবং প্রচুর পানি পান করুন।
1 Comments